দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন



আগে মানুষ যেভাবে দেশি মুরগি পালোন করত সে ভাবে পালোনে খাবার কম লাগতো কারন সবসময় ছাড়া থাকায় নিজেথেকে খাবার সংগ্রহ করে।তবে বংশবিস্তার হতো অনেক কম। এই পদ্ধতিতে মুরগির বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় মুরগির বাচ্চা দের ও রোগ দেখা দেয় এবং অনেক বাচ্চা মারা যায় সুতরাং উৎপাদন কম হয়। আপনি যদি দেশি মুরগি সঠিক পালন পদ্ধতি জানতে চান তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন আজকের এই আর্টিকেলে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।



দেশি মুরগি খামার এর থেকে ছেড়ে পোশায় লাভ বেশি হয়। এভাবে পালন এ মুরগি বিভিন্ন পোকামাকর ও পড়ে থাকা খাবার খায় এতে করে বাড়তি খাবার তেমন লাগেনা।এভাবে দেশি মুরগি পালোনে খাবার এর খরচ খুবি কম লাগে এবং মাসিক বা বাৎসরিক কোন ঔষধ বা ভিটামিন এর প্রয়োজন হয় না।

ভূমিকা

দেশি মুরগি পালনের জন্য অগের পদ্ধতি বা ছেড়ে পোষা টায় সঠিক পদ্ধতি। কারন দেশি মুরগি কখোন বন্ধ করে পালা যায়না আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালোন অনেক ব্যয়বহুল। খামারে দেশি মুরগি ডিম কম দেয় ও বাচ্চাও কম হয় এবং খাবার দিতে হয় নিয়মিত। অপরদিকে দেশি মুরগি ছেড়ে পাল্লে খরচ টাও অনেক কম এবং ডিম বাচ্চা করে অনেক। একটি দেশি মুরগি বছরে প্রায় ১৫০ টা ডিম দিয়ে থাকে এরা সাধারনত এক টানা ২০ থেকে ২২ টা ডিম দিয়ে থাকে।
দেশি মুরগি কিভাবে পালন করা হয়?

পূর্বে দেশি মুরগি সাধারণত মুক্তভাবে বা ছেড়ে পোষা হয় গ্রামে বা শহরে সব জায়গাতেই এই মুরগি ছেড়ে পোষা দেখা যায়। তবে এখন দেশি মুরগি ও খামারে পালা দেখা যায় অনেক মুরগি ব্যবসায়ী এখন দেশি মুরগির খামার গড়ে তুলেছে এবং অনেকে অনেক লাভবান হচ্ছে তবে প্রকৃতপক্ষে দেশি মুরগি মুক্ত আকাশের নিচে ছেড়ে পোষা উত্তম এবং অধিক লাভজনক।

কারণ খামারে দেশি মুরগি পালা অনেক ব্যয় বহুল কারণ সম্পূর্ণ খাবার কিনে খাওয়াতে হয় এতে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে যা ছেড়ে পুষলে তুলনামূলক অনেক কম খরচ হতো। তাই সব সময় চেষ্টা করতে হবে দেশি মুরগি ছেড়ে পালার। তাহলে খুব দ্রুত সফলতা অর্জন করা যাবে এবং অধিক লাভ করা সম্ভব এই দেশি মুরগি পালন করে।


দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি

দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি খুব একটা কঠিন না কারণ অন্যান্য মুরগির বাচ্চার তুলনায় দেশি মুরগির বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। দেশি মুরগির বাচ্চা জন্মের পর পানির সাথে লাইসো ভ্যাট মিশিয়ে পানি দিয়ে রাখুন। এর কয়েক ঘন্টা পর থেকে মুরগির বাচ্চার ফিড এবং চালের খুদ দিতে হবে। এরপর মুরগির বাচ্চার বয়স যখন দুই থেকে তিন দিন হবে তখন যে কোন একটা এন্টিবায়োটিক পানির সাথে মিশিয়ে মিশ্রিত পানি পান করতে দিতে হবে।

এতে করে মুরগির বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সবকটি বাচ্চা সুস্থ থাকবে। মুরগির বাচ্চা গুলোকে হালকা রোদে রাখলে ভালো হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে রোদের তাপ যেন বেশি না হয়। অর্থাৎ সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত এক ঘন্টা হালকা রোদে রাখতে হবে এভাবে কয়েকদিন খেয়াল রাখলে মুরগির বাচ্চা সবকটি টিকে যাবে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকবে না কারণ আমরা দেখেছি অনেক সময় মুরগির বাচ্চার চার ভাগের এক ভাগ মারা যায় কিন্তু এভাবে লালন-পালন করলে সবগুলোই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

দেশি মুরগী পালনে লাভ কেমন?

দেশি মুরগি পালনে লাভ কেমন সেটা নির্ভর করবে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতির ওপর কারণ সঠিকভাবে পালন না করতে পারলে কখনোই লাভ এর মুখ দেখা সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের পালন পদ্ধতিটা সঠিক করতে হবে তাহলে দেশি মুরগি থেকে অধিক পরিমাণ লাভ করা সম্ভব। প্রথমেই বলে রাখি দেশি মুরগি আর ফার্মের মুরগির মধ্যে পার্থক্য আছে সুতরাং দেশি মুরগি ফার্মের মুরগির মত খামারে লালন পালন করলে লাভ খুবই কম হয়।

কারণ পুরো খাবারটা কিনে খাওয়াতে হয়। অপরদিকে দেশি মুরগি খোলা আকাশের নিচে ছেড়ে পোষা অনেক লাভজনক কারণ এখানে অতিরিক্ত খাবারের তেমন প্রয়োজন হয় না বাসার উচ্ছিষ্ট খাবার বাসি খাবার ভাত তরকারি ময়লা আবর্জনা থেকে পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে এরা এদের খাবার সংগ্রহ করে যখন এদেরকে খামারে পালা হয় তখন তারা এ খাবারগুলি পায় না। সুতরাং তাদেরকে ধান গম ভুট্টা ভাঙ্গা ফিড চাল চালের খুদ গমের ভুসি ইত্যাদি খাবার কিনে খাওয়াতে হয় এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়।

দেশি মুরগির মাংস খেলে কি হয়?

দেশি মুরগির মাংস অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেক বেশি প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। মুরগির মাংসের একটি অন্যতম দিক হলো এই মাংস আমাদের শরীরের ওজন কমায়। দেশি মুরগির মাংস আমাদের শরীরের অধিক ওজন কমাতে সাহায্য করে এখন আমাদের বড় সমস্যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মোটা ওজন বেড়ে যায়। দেশি মুরগির মাংস আমাদের এ ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের শরীর রাখে ফিট।

এছাড়াও দেশি মুরগির মাংসে অনেক প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের প্রোটিনের অভাব দূর করে এবং শরীরের রাখে সুস্থ দেশি মুরগির বাচ্চায় অনেক রক্ত থাকে। দেশি মুরগির বাচ্চা খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে অনেক সময় অপারেশনের রোগী বা দুর্বল রোগীদের ডাক্তার দেশি মুরগির বাচ্চা খেতে বলে এতে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয় এবং প্রোটিনের অভাব দূর হয় দেশি মুরগির মাংস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

দেশি মুরগি কত মাস বয়সে ডিম দেয়?

দেশি মুরগি সাধারণত ১৪০ থেকে ১৬০ দিনের মধ্যে ডিম দেয় কিন্তু মুরগি কত দিনে ডিম দিবে এটা নির্ভর করে একমাত্র লালন-পালন এবং খাবারের ওপর। কারণ সঠিক খাবার না পেলে অনেক মুরগি ডিম দিতে অনেক দেরি করে। তাই আগে ফোকাস দিতে হবে মুরগির খাবারের ওপর মুরগির শরীর ভালো থাকলে ভিটামিনের কোন অভাব না থাকলে ১৪০ দিনেই ডিম দিতে শুরু করে। আর যদি ভিটামিনের অভাব থাকে তাহলে দেরি হতে পারে সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এবং ভিটামিন প্রয়োজন হলে পোল্ট্রি ফার্ম এর দোকান থেকে ভিটামিন নিতে হবে তাহলে খুবই দ্রুত ডিম দেয়া শুরু করবে।


     

দেশি মুরগি কি খায়?

দেশি মুরগির নির্ধারিত কোন খাবার নেই কারণ এই মুরগি বাসার বেঁচে যাওয়া বাঁশি খাবার যেমন ভাত তরকারি শাক-সবজি বিভিন্ন পোকা মাকড় খেয়ে তাদের খাবার সংগ্রহ করে। তবে এই খাবারের পাশাপাশি কিছুটা কেনা খাবারও দিতে হয়। এতে করে মুরগি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পেয়ে থাকে এবং মুরগির শরীরে ভিটামিনের কোন অভাব দেখা যায় না। এই অতিরিক্ত খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো,

  • ভুট্টা ভাঙ্গা
  • গমের ভুসি
  • চালের খুদ
  • মুরগির ফিড
  • গম ,ধান ও চাল

দেশি মুরগি চেনার উপায় কি?

দেশি মুরগি চেনা খুবই সহজ এই মুরগি সাধারণত অনেক চালাক ছটফটে হয়ে থাকে এবং অন্যান্য মুরগির তুলনায় ওজনে হাল্কা হয়ে থাকে। এই মুরগির পা অন্যান্য মুরগির তুলনায় চিকন হয়ে থাকে তবে শুধু পা দেখে বিবেচনা করা যাবে না কারণ সোনালী মুরগির ও পা চিকন হয়ে থাকে। দেশি মুরগির মাংস কিছুটা বাদামি রঙের হয়ে থাকে। কিছু কিছু দেশি মুরগির মাথায় ঝুঁটি থাকে এসব উপসর্গ দেখে দেশি মুরগি চেনা খুবই সহজ দেশি মুরগির মাথা লম্বা টাইপের হয় এবং এই মুরগির চোখ মুখ দেখে যে কেউ চিনতে পারে এটা দেশি মুরগি সুতরাং দেশি মুরগি চেনাটা খুব একটা কঠিন নয় একটু ধারণা থাকলেই যে কেউ চিনতে পারবে।

আমাদের মন্তব্য

আজকে আপনাদেরকে এই আর্টিকেলে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করলাম আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়েছেন এবং ধারণা লাভ করতে পেরেছেন আসলে দেশি মুরগি খামারের তুলনায় বাসায় ছেড়ে পোষা অধিক লাভবান হতে সাহায্য করে এতে করে অতিরিক্ত কোন খাবারের প্রয়োজন হয় না তবে আমাদের শুধু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে এভাবে মুক্ত করে দেশি মুরগির বাচ্চা হবার পর ভিটামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে যা আপনারা উপরের বিস্তারিত আর্টিকেলে পড়েছেন।

এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের যদি আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে রীতিমতো আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিডিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রুপ বাংলা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url